হোম / জাতীয় / জীবনের ১৪টি বছরের বিনিময়ে রাষ্ট্রপক্ষকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করার আদেশ
court

জীবনের ১৪টি বছরের বিনিময়ে রাষ্ট্রপক্ষকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করার আদেশ

পনের বছর আগের ধর্ষণের এক ঘটনায় ‘ভুল আইনে’ বিচার করায় ভোলার চরফ্যাশনের আব্দুল জলিলকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

সেইসঙ্গে জলিলের দণ্ডাদেশ বাতিল করে অন্য কোনো মামলায় গ্রেপ্তার না থাকলে তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে বলা হয়েছে হাই কোর্টের রায়ে। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে জলিলের করা জেল আপিল নিষ্পত্তি করে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর বিচারপতি এ এফ এম আবদুর রহমানের একক বেঞ্চ এই রায় দেয়।

প্রসিকিউশনের নথি থেকে জানা যায়, ২০০১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রতিবেশীর পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুকে ‘প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের’ অভিযোগে পরদিন চরফ্যাশন থানায় মামলা হয়।

বর্তমানে প্রায় ত্রিশ বছর বয়সী জলিলকে ২০০১ সালের এক ধর্ষণের ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত। সেই সঙ্গে তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন বিচারক। সে সময় তার বয়স ১৫ বছর। কিন্তু শিশু আইনে বিচার না করে তার বিচার হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে।

নথি পর্যালোচনায় হাই কোর্টের রায়ে বলা হয়, অপরাধ ঘটার তারিখে আসামি যে নাবালক ছিল- তা বিশ্বাস করেননি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক। অথচ অভিযোগকারী নিজেই এজহারে আসামির বয়স ১৬ লিখেছেন।  তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে আসামির বয়স লিখেছেন ১৫ বছর।

হাই কোর্টের রায়ে আদালত বলেছে, “এই আদালত মনে করে, রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক আসামি আব্দুল জলিলকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করাই যুক্তিযুক্ত। এ মর্মে এই আদালত আসামি আব্দুল জলিলের জীবনের ১৪টি বছরের বিনিময়ে রাষ্ট্রপক্ষকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করার আদেশ প্রদান করছে।”

রায়ে হাই কোর্ট বলেছে, তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদন অনুযায়ী অভিযোগপত্র দাখিলের দিন আসামির বয়স ছিল ১৫ বছর। অথচ ১৯৭৪ সালের শিশু আইনের ২ (জি) ধারায় ষোল বছরের কম বয়সীদের শিশু অভিহিত করা হয়েছে।

“এ কারণে জলিল শিশু আইন ১৯৭৪ এর বিধান অনুযায়ী প্রকৃত বয়স নির্ধারণ পূর্বক বিচারপ্রাপ্তির অধিকারী ছিল। কিন্তু ওই অধিকার হতে বঞ্চিত করে সাধারণ আইনে বিচার করায় সে (জলিল) সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদের আওতায় আইনের আশ্রয় পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে।”

রায়ে হাই কোর্ট বলেছে, আইনের বিধান ছাড়া কোনো বিচার হলেও তা ‘অবিচার’ বিবেচিত হতে বাধ্য। প্রথম জেল আপিলে হাই কোর্ট জলিলকে ‘নাবালক’ বিবেচনা করার পরও ট্রাইব্যুনালের বিচারক যে কারণেই তাকে সাবালক বিবেচনা করে থাকুক না কেন, তা ‘বিচারের নামে খামখেয়ালিপূর্ণ অবিচারের সামিল’।

হাই কোর্টের এ রায়ের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, “আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, যে লোক নাবালক ছিল, তাকে সেইভাবে বিচার করা হয়নি। এতে তার অনেক কষ্ট পেতে হয়ে। আদালতের মতে এটি একটি মিথ্যা মামলা।”

আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আসামিকে এখন ৫০ লাখ টাকা দেওয়া রাষ্ট্রপক্ষের জন্য ‘খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার হবে’ বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা। এই রায়ে অর্থদণ্ড রাষ্ট্রের উপর ‘চাপানো হয়েছে’ মন্তব্য করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “এখানে আপিল করা উচিত। কিন্তু রায়ে অন্য যে পর্যবেক্ষণ আছে সেগুলোর বিষয়ে আমাদের রাষ্ট্রপক্ষের কোনো বক্তব্য নেই।”

এছাড়াও দেখুন

শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করে প্রজ্ঞাপন

দশম জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন সংসদ সদস্য শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন ...