হোম / জাতীয় / আজ হাবিবার বিয়ে
habiba

আজ হাবিবার বিয়ে

সরকারি শিশু পরিবারে বড় হলেও হাবিবার বিয়ের সব আয়োজন যে ধুমধাম করেই হবে, সেটা জানা গিয়েছিল আগেই। ব্যক্তিক্রম হয়নি গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানেও। হাবিবার ‘হলুদ ছোঁয়া’তে তাই বর্ণিল আলোকশয্যা, সানাইয়-নহবতের সুর। তারকা বা সমাজের উচ্চ শ্রেণির কোনও পরিবারের মেয়ে না হলেও হাবিবার হলুদর এই আয়োজনে হাজির প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা তো বটেই, রাজনীতিবিদ, সমাজসেবীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। আর এর সংবাদ সংগ্রহের জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের দৌড়-ঝাঁপ তো রয়েছেই। সবার উপস্থিতিতেই বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) রাতে শেষ হলো হাবিবার গায়ে হলুদের আনুষ্ঠানিকতা। আজ শুক্রবার (১৪ জুলাই) রাতে তার বিয়ে।

বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৯টায় হাবিবাকে নিয়ে আসা হয় হলুদের মঞ্চে। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন সরকারি শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক রওশন আরা খাতুন আর সরকারি শিশু পরিবারের দীর্ঘ এক দশকের সহপাঠীরা। অতিথিরা হাজির আগেই। হাবিবা মঞ্চে ওঠার পর সেখানে এলেন হাবিবার বাবা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, সঙ্গে তার স্ত্রী ফারহানা রহমান। শুরু হলো হাবিবার ‘হলুদ ছোঁয়া’।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সমাজসেবা প্রকল্পের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার, পৌর মেয়র নায়ার কবীর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেইন, জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোস্তফা মাহমুদ সারোয়ার, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শ্রাবণী রায়সহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সবাই উপস্থিত হয়েছিলেন হাবিবাকে হলুদ দিতে। এর বাইরেও উপস্থিত ছিলেন শতাধিক আমন্ত্রিত অতিথি।

হাবিবার দীর্ঘদিনের সঙ্গী শিশু পরিবারের সুবর্ণা আক্তার, শিপা বেগম, রহিমা আক্তার জানান, সাধারণত সন্ধ্যার পরেই শিশু পরিবারে নেমে আসে শুনসান নিরবতা। কিন্তু হাবিবার হলুদের আয়োজনে সেই শিশু পরিবার মেতে উঠেছে উৎসবের রঙে। অনাথদের একটি আশ্রয়ণ আবাসে এমন উৎসব আর সমাজের শীর্ষ ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতি তাদের কল্পনারই বাইরে।

শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক রওশন আরা খাতুন বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন, ‘আজকের দিনে কিছু বলার মতো ভাষা নেই। শিশু পরিবারের ১৭ বছরের ইতিহাসে এমনটা কখনও হয়নি। পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান আর শিশু পরিবারের বন্ধু মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকারের ইচ্ছা আর প্রচেষ্টাতেই সবকিছু হচ্ছে।’ হাবিবার জন্য শুভকামনা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘হাবিবার বিয়ের অনুষ্ঠান একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। পরবর্তী সময়ে এখানকার অন্য মেয়েরাও যেন সুন্দর ভবিষ্যৎ অর্জন করতে পারে, আমরা সে চেষ্টা চালিয়ে যাব।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৌর মেয়র নায়ার কবীরও এই বিয়ের অনুষ্ঠানকে ‍দৃষ্টান্ত হিসেবে অভিহিত করে ধন্যবাদ জানালেন পুলিশ সুপারকে। আর পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ‘হাবিবা এখন আর অনাথ নয়, আমার পরিবার ওর পাশে এসে। আমাদের সমাজে এমন হাবিবা অনেক রয়েছে। আমি মনে করি, সরকারের একার পক্ষে তাদের সবার পাশে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। তাই আমি কেবল একটি উদাহরণ তৈরির চেষ্টা করেছি। সমাজের অন্য বিত্তবানরা এগিয়ে এলে হাবিবার মতো যারা আছে, তাদের সবার জন্য সুন্দর একটি ভবিষ্যৎ আমরা গড়ে দিতে পারব।’

উল্লেখ্য, ১৮ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ায় শিশু পরিবার ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল হাবিবার। কিন্তু মায়া কাটাতে পারেনি হাবিবা। তাই তো ১০ বছর এই শিশু পরিবারের কাটানো সময়ে স্মৃতি কাটিয়ে মামা-মামির কাছে ফিরে যাওয়া হয়নি তার। পরে শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক রওশন আরা খাতুন তার পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন। মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকারের সহায়তায় হাবিবার দায়িত্ব নেন পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান। সবার প্রচেষ্টায় ঠিক হয় হাবিবার বিয়ে। সেই বিয়ের পুরো দায়িত্বই নিজের কাঁধে তুলে নেন এসপি মিজানুর রহমান।

বৃহস্পতিবার হলুদ অনুষ্ঠানের পর আজ সেই আলোচিত বিয়ে। বর পুলিশ কনস্টেবল মো. জাকারিয়া আলম। হলুদ অনুষ্ঠানের মতোই বিয়ের অনুষ্ঠানও হবে জমকালো। স্থানীয় মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ শীর্ষ রাজনীতিবিদ ছাড়াও প্রশাসন, পুলিশ, ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন এই বিয়েতে।

এছাড়াও দেখুন

শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করে প্রজ্ঞাপন

দশম জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন সংসদ সদস্য শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন ...