হোম / টপ নিউজ / সড়কে নৌকা প্রসঙ্গে মেয়র যা বললেন
boat in road

সড়কে নৌকা প্রসঙ্গে মেয়র যা বললেন

নগরের আগ্রাবাদে জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নেওয়ায় একটি সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যাতায়াতের জন্য নৌকা কেনা হয়েছে। সেই নৌকা এখন ওই দপ্তরে যাতায়াতের অন্যতম নিরাপদ বাহন হয়ে উঠেছে। আগ্রাবাদ আবাসিক এলাকার আরও কয়েকটি বাড়ির লোকজন যাতায়াত সমস্যা কাটাতে কমপক্ষে চারটি নৌকা কিনেছেন বলে জানা গেছে।

শীত ও বসন্ত ছাড়া প্রায় পুরো বছরই জোয়ারের পানিতে আগ্রাবাদ এলাকা সয়লাব। সম্প্রতি বৃষ্টির কারণে এ জলাবদ্ধতা আরও বেড়েছে।

চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-৪ কার্যালয় সূত্র জানায়, আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকার ১ নম্বর সড়কের ছয়তলা ভবনে ১৭টি এবং একই সড়কের হাতেখড়ি স্কুলের বিপরীতে ১৬তলা ভবনে ৫৭টি অঞ্চলভিত্তিক কর কার্যালয় রয়েছে। দুই ভবনে প্রায় সাড়ে ৪০০ কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন।

চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-৪–এর কর কমিশনার আহমদ উল্লাহ এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে অফিসে উপস্থিত থাকতে হয়। আমাদের জন্য সরকারি গাড়িও আছে। কিন্তু বৃষ্টি ও জোয়ারে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে অফিসে যাতায়াতের সড়কটি দেড় থেকে চার ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। এ জন্য ১১ জুলাই ২৬ হাজার টাকা দিয়ে আমরা একটি নৌকা কিনেছি।’

ভিডিও দেখুন নিচে

আহমদ উল্লাহ আরও বলেন, ‘নৌকাটিতে একসঙ্গে তিন-চারজন যাতায়াত করতে পারে। নৌকা কেনার কারণে আমাদের যাতায়াতে সমস্যা কিছুটা কেটে গেছে। চট্টগ্রাম কর অঞ্চলের একজন দারোয়ান দাঁড় বেয়ে নৌকাটি চালিয়ে নিয়ে যান।’

নগরের আগ্রাবাদ আবাসিক এলাকার বিভিন্ন বাড়ির নিচতলায় এখন তিন থেকে পৌনে পাঁচ ফুট পানি। সেখানকার বাসিন্দাদের এখন প্রধান বাহন নৌকা ও রিকশা। তিন-চারটি নৌকা দিয়ে এলাকার মানুষ কর্মস্থলে যাওয়া আসা করছেন।

আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার ২২ নম্বর সড়কের একটি বাড়ির বাসিন্দা সৈয়দ মো. ইয়াসিন হীরা প্রথম আলোকে আজ বিকেলে বলেন, ‘আজ দুপুরে (সোমবার) আমার বাড়ির নিচতলা প্রায় পৌনে পাঁচ ফুট পানির নিচে ডুবে গেছে। আমার ব্যক্তিগত গাড়িটি গ্যারেজের ভেতরে পানিতে পুরো ডুবে আছে। চিকিৎসক স্ত্রী হাসপাতালে যেতে পারেনি।’

সৈয়দ মো. ইয়াসিন আরও বলেন, ‘যাতায়াত সমস্যা দূর করতে সীতাকুণ্ড থেকে একটি নৌকা কেনার কথাবার্তা চলছে। তবে আমাদের সিডিএ এলাকার বাসিন্দারা চারটি নৌকা ইতিমধ্যে কিনেছে।’

আগ্রাবাদ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, টানা বৃষ্টি ও অমাবস্যার কারণে জোয়ারের পানি বেড়ে গেছে। এতে আমাদের এলাকায় পানি থইথই করছে। নিচতলার বাসাগুলো ডুবে গেছে। বাসা থেকে বাদামতলী মোড় পর্যন্ত আসা যাওয়া করতে রিকশা ভাড়া গুনতে হয় ৮০ থেকে ১০০ টাকা।

বৃষ্টির পানি সরে যাওয়ার আগেই জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে নগরের আগ্রাবাদ, বাকলিয়া ও চকবাজারের কিছু এলাকায়। আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার এই সড়কে জলাবদ্ধতার মূল কারণ জোয়ারের পানি।

ভিডিও দেখুন নিচে

দুই সপ্তাহের ব্যবধানে জোয়ারের কারণে চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ, চকবাজারসহ কিছু এলাকায় আবারও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এর সঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাত যোগ হওয়ায় এসব এলাকার বাসিন্দাদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। কোথাও জমে গেছে হাঁটুপানি, কোথাও বা গোড়ালি পর্যন্ত। জলাবদ্ধতার কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার আগ্রাবাদের একটি বিদ্যালয়ের পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে হয়েছে। আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার সড়কে পারাপারের জন্য চলেছে নৌকা।

ভুক্তভোগীরা জানান, গতকাল সকাল ১০টার পর থেকে চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, বেপারিপাড়া, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, বাকলিয়া ও চকবাজারের মোহাম্মদ আলী শাহ লেন এলাকা জোয়ারের পানিতে ডুবতে শুরু করে। সিডিএ আবাসিক এলাকা বিকেল পর্যন্ত পানিতে ডুবে ছিল।

আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার ১৭ নম্বর সড়কে অবস্থিত আগ্রাবাদ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে গতকাল জোয়ারের পানির কারণে পঞ্চম, অষ্টম ও দশম শ্রেণির অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সালমা আখতার প্রথম আলোকে বলেন, বেলা সাড়ে ১১টা থেকে তিন শ্রেণির পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জোয়ারের পানির কারণে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। স্থগিত হওয়া পরীক্ষা শুক্রবার (আজ) নেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার সময়ও এলাকা থেকে পানি নামেনি বলে তিনি জানান।

পতেঙ্গা আবহাওয়া দপ্তর সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে গত বুধবার বেলা তিনটা থেকে গতকাল বেলা তিনটা পর্যন্ত ৬২ দশমিক ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত আগামী দু-এক দিন অব্যাহত থাকতে পারে।

ভিডিও দেখুন নিচে

গতকাল দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, আগ্রাবাদ এক্সেস সড়কে প্রায় হাঁটুপানি জমে আছে। সড়কের নাজুক অবস্থার কারণে অনেকে হেঁটেই গন্তব্যে যাচ্ছেন। আবদুর রশিদ নামের এক চাকরিজীবী বলেন, সড়কের বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্ত। রিকশা করে গেলে কখন কী দুর্ঘটনা ঘটে তার ঠিক নেই। তাই হেঁটেই হালিশহরের বড়পুল থেকে আগ্রাবাদে যাচ্ছেন তিনি।

এক্সেস সড়কের মতো আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায়ও একই অবস্থা দেখা যায়। ওই এলাকায় গিয়ে কর কার্যালয়ের সামনে নৌকার দেখা পাওয়া গেল। ওই নৌকায় চারজন ছিলেন। তাঁদের একজন চাকরিজীবী জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কর্মস্থলে না গিয়ে উপায় নেই। তাই বাধ্য হয়ে নৌকায় উঠেছেন।

আগ্রাবাদের বেপারিপাড়ার বাসিন্দা কল্পনা বেগম বলেন, বাসায় জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ায় রান্না করতে পারেননি।

এদিকে গতকাল সকালে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে চকবাজারের মোহাম্মদ আলী শাহ লেন ছাড়া কাঁচাবাজার ও কাপাসগোলা, নগরের ডিসি রোড, কে বি আমান আলী সড়ক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। মূলত চাক্তাই খালের দুপাশে চকবাজার ও পশ্চিম বাকলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। দুপুরের দিকে এসব এলাকার পানি নামে।

চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, জোয়ারের সময় চাক্তাই খালের পানি নালা-নর্দমা দিয়ে ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে যায়। পরে ভাটার সময় পানি নেমে যায়।

জোয়ারের পানিতে এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় দুই কন্যাকে বিদ্যালয়ে নিয়ে যেতে পারেননি বলে জানান চকবাজার মোহাম্মদ আলী শাহ লেনের বাসিন্দা আবদুল হামিদ। বেলা তিনটা পর্যন্ত এলাকা থেকে পানি নামেনি তাঁর এলাকায় পানি ছিল বলে তিনি জানান।

ভিডিও

এছাড়াও দেখুন

শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করে প্রজ্ঞাপন

দশম জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন সংসদ সদস্য শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন ...