হোম / লাইফস্টাইল / পরিবার রাজি নয়, চিকিৎসা না নিয়ে ফিরে যাচ্ছে সবুজ
sobuj

পরিবার রাজি নয়, চিকিৎসা না নিয়ে ফিরে যাচ্ছে সবুজ

ঢামেক শিশু সার্জারি বিভাগের একাধিক চিকিৎসক বুধবার (২৬ জুলাই) বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, পরিবারটিকে অনেক বোঝানো হয়েছে কিন্তু তারা রাজি হয়নি। তারা অপারেশন করাবে না। ফলে পরিবারের মতের বাইরে গিয়ে কিছু করা চিকিৎসকদের পক্ষে সম্ভব নয়। ঝুঁকিপূর্ণ বলেই পরিবারটি অস্ত্রোপচারে রাজি হয়নি। এ বিষয়ে সবুজের দাদি নূরজাহান বেগম বলেন, ‘গ্রামে অনেক ডাক্তার দেখাইছি, তারা বলছিল এটা এভাবেই থাকবে। যতদিন হায়াত (আয়ু) আছে, ততদিন বাঁচবে আর হায়াত ফুরায়ে গেলে আল্লায় নিয়ে যাইবো ।’

ফেসবুকে সবুজকে নিয়ে লেখালেখির পর স্বাস্থ্য সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম নিজে উদ্যোগী হয়ে শিশুটিকে ঢাকায় নিয়ে আসেন, ভর্তি করান ঢামেক হাসপাতালে। তিনি দেখাও করেন পরিবারটির সঙ্গে।

গত ২২ জুলাই ঢামেক হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় সবুজের দাদি নূরজাহান বেগম আর বাবা নূর ইসলামের সঙ্গে। তখন তারা অপারেশন করানোর কথা বলেছিলেন। সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার একটি গ্রামে অন্যের ক্ষেতে কাজ করা সবুজের বাবা নূর ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সবুজের জন্মের পর দেখা গেল তার পেটের ভেতরের নাড়িভুঁড়ি সব দেখা যায়, কেবল ওপরে একটা পাতলা চামড়ার মতো রয়েছে। দাদি নূরজাহান বেগমের ভাষায়- ডিমের কুসুমের ওপরে যেমন সাদা পাতলা অংশ থাকে, এটি ঠিক তেমনই। সেই চামড়ার ভেতর দিয়ে পেটের সব দেখা যেত।

নূরজাহান বেগম জানান, জন্মের পর থেকে সিরাজগঞ্জের শিশু হাসপাতালসহ নানা বেসরকারি ক্লিনিকে দেখানো হয়েছে সবুজকে। কিন্তু চিকিৎসকরা কিছু করতে পারেননি। তারা বলেছেন এমন রোগী তারা কোনোদিন দেখেননি। অসুখ ধরতে না পারলেও তারা ওষুধ দিয়েছেন। সেগুলো সেবন করেও লাভ হয়নি। কবিরাজি চিকিৎসাও হয়েছে। এক সময় চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সবুজ বড় হতে থাকলে তার পেটও বাইরের দিকে বাড়তে থাকে। তবে ওপরের পাতলা চামড়াটাও মোটা হয়ে যায়। এখন আর ভেতরের কিছু দেখা যায় না।

এ সময় পাশ থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া সবুজ বলে ওঠে, তার কোনও ব্যথা নেই, হাঁটতে চলতে খেলতেও কোনও সমস্যা নেই, পেটটাই কেবল ঝুলে থাকে।

ঢামেক শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক কাজল বলেন, ‘গত রবিবার সবুজের চিকিৎসায় একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। একটু ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও আমরা অপারেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু পরিবার সেটি চাচ্ছে না। আমরা পুরো মেডিক্যাল টিম বসে শিশুটির বাবা ও দাদির সঙ্গে কথা বললাম, অনেক ভাবে বোঝালাম, রাজি করানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু কোনোভাবেই তাদের কনভিন্স করানো গেল না ।’

তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের বলেছিলাম, ছেলেটির চামড়ার নিচে নাড়িভুঁড়ি আর যকৃৎ, কোনও অসতর্ক মুহূর্তে সে যদি হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় তাহলে সেগুলো ফেটে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তার মৃত্যু হতে পারে। কিন্তু পরিবারটির জবাব ছিল, ছোট বেলায় যখন হয়নি, এখন কেমনে হবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একই বিভাগের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘অপারেশন করাতে রাজি না হওয়াতে দুটো জিনিস হতে পারে। হয় তারা ‘স্নেহে অন্ধ’ হয়ে গেছেন। তবে খারাপ দিক যেটি হতে পারে তা তাহলো- শিশুটির জন্য ইতোমধ্যেই তারা প্রায় ৮০ হাজার টাকা পেয়েছে সহযোগিতা হিসেবে। হয়তো তারা আশা করছে, এভাবে আরও অনেক টাকা পাওয়া যাবে। আমাদের কথা হলো, অপারেশন যদি তারা নাই করে তাহলে তাদের আসার দরকার ছিল না।’

এরকম একটি ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশনে আপনারা সফল হতেন কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক কাজল বলেন, ‘অত্যন্ত জটিল অপারেশন হতো- এটা নিশ্চিত। কারণ, পেটের মধ্যে আমরা যে যকৃৎ, প্লীহাসহ আরও অন্যান্য কিছু ধারণ করি, তার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে। কিন্তু এই ছেলেটির এসব অঙ্গ জন্মগতভাবেই বাইরে, এখন তো বয়সও ১৩ বছর।, কিন্তু পেটের ক্যাপাসিটি বিল্ডআপ করেনি। আমাদের পরিকল্পনা ছিল, তিন থেকে চার বার অপারেশন করার। যেন প্রতিবার পেটের ভেতরে এসব অঙ্গ অল্প অল্প করে ঢোকানো যায়, যেন পেটের ক্যাপাসিটি বাড়ে। তবে জটিল হলেও অসম্ভব ছিল না।’

এছাড়াও দেখুন

শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করে প্রজ্ঞাপন

দশম জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন সংসদ সদস্য শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন ...